ভালবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১৪)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:৫৪:২০ বিকাল
প্রতিদিন ভোরবেলায়ই বের হন। ফজরের নামাজ শেষ করে আর ঘুমান না। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন, তাফসির থেকে কিছু পড়েন। কিছুক্ষণ আল্লাহপাকের স্মরণে অতিবাহিত করে মসজিদ থেকে বের হন। সোজা বাসায় এসে রায়হানের মায়ের সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে কিছু সময় কাটান।
আদা দিয়ে রং চা বানানো-ই থাকে। তিনি এলে গ্রামে ভাজা মুড়ি সামনে রাখেন আয়েশা বেগম। দুজনের দিনের শুরুর এই চা-চক্রটি এভাবেই চলছে... বছরের পর বছর। এক দশক ধরে একে অপরকে এভাবেই সঙ্গ দিয়ে চলেছেন... নিজেদের ভিতরের সমঝোতা এতোটাই অনুভূতিতে তীব্র এবং তীক্ষ্ণতায় সুচাগ্র যে, একজন অন্যজনের পরবর্তী একশন কি হবে সেটাও একই সাথে বুঝে নিতে পারেন।
এরপর হাঁটতে বের হন।
দুজনে আগে একসঙ্গে হাঁটতে যেতেন। ইদানিং রায়হানের মায়ের হাঁটুতে সমস্যা হওয়াতে বেশ কিছুদিন রাশেদুল করীম সাহেব একাই হাটছেন। নদীর পারের বিশুদ্ধ বাতাস, মনকে কেমন মাতাল করে দিতে চায়। অবশ্য এই বয়সে মাতাল হবার ধরণটা তার কাছে ভিন্ন। এই মাতাল হওয়াটা উন্মত্ততার সাথে তুল্য নয়। এ স্রেফ সমস্ত হৃদয় জুড়ে ভালোলাগার এক ঝিরঝিরে প্রবাহ!
আজও নদীর পার ধরে হেঁটে হেঁটে শহরের পশ্চিমে মাছ ঘাটার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে পরিচিত জনেরা কুশল বিনিময় করলেন। একজন অন্যজনের শান্তিকামনা করলেন। এই জেলা শহরটি বেশী বড় নয়। সবাই সবাইকে চিনে। সরকারি দলের এম.পি'র বাসা তার বাড়ির সাথেই। বিরোধী দলের এম.পি ও একটু দূরে থাকেন। তবে সবাই-ই রাস্তার এ মাথা এবং ও মাথায় বসবাস করেন। চলাফেরায় 'ওনারা' খুবই স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যা অন্য বড় শহরগুলোতে কল্পনাই করা যায় না। অবশ্য 'ওনারা' যে টুকু সময় এলাকায় থাকেন, ততোক্ষণের কথাই।
কেশব ডাক্তারের চেম্বার পার হলেন। এখানে আসতেই রায়হানের মায়ের পায়ের ব্যথার কথাটাই কেন জানি মনে চলে এলো।
এবং তিনি থেমে গেলেন।
আয়েশা বেগমের ব্যথার কথা ভেবে নয়। এই যে বার বার আয়েশা বেগমকে 'রায়হানের মা' ভেবে চলেছেন। রায়হানকে যতই মনে করতে চান না, কেন মনে বার বার ফিরে আসে। শাহেদও তো তার ছেলে। 'শাহেদের মা' শব্দটি মনে কেন আসে না।
ভালোবাসা কি অভিমানের সাথে মিশে রক্তে রক্তে প্রবাহিত হচ্ছে? নচেৎ এমনটি কেন হচ্ছে?
সমুদ্রে মাছ ধরে এরকম বেশ কয়েকটি ট্রলার নদীর পারে এলোমেলো করে রাখা দেখতে পেলেন। এগুলো দেখার সাথে সাথে খুব নির্মম একটি ঘটনার কথা মনে পরে গেলো। জেলেদের সাথে এই ক'দিন আগে এরকম হয়েছিল। গভীর সমুদ্রে একদল ডাকাত একটি মাছ ধরার ট্রলারের সকল জেলেকে ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষে আটকে বাহির থেকে দরোজায় হাতুড়ি-পেরেক মেরে ডুবিয়ে দেয়। এর আগে সকল মাছ এবং জাল নিজেদের ট্রলারে তুলে নেয় অবশ্য। ডাকাতদের এই নির্মম কাজটি পরবর্তীতে ট্রলারটি যে কোনোভাবে উদ্ধার হলে এক সাথে এতোগুলো মৃতদেহ ওভাবে বদ্ধ কক্ষে পাওয়া যায়। মানুষের মানসিকতার এতো দ্রুত অধঃপতন কেন হচ্ছে? সময় এখন এতোটা বৈরী হয়েছে যে, ন্যুন্যতম মানবিকতাবোধটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলতে বসেছি।
আজ আর হাঁটতে ইচ্ছে করলো না।
যাবার সময় বাজার হয়ে যেতে হবে। প্রতিদিনই দুজনের জন্য টুকটাক বাজার করতেই হয়। আয়েশা বেগম মাছ এবং অন্য জিনিসগুলো সাধারণত ফ্রেস না হলে খান না। দুজন মানুষের জন্য কি-ই বা লাগে। তারপরও নিজে ইচ্ছেমত এটা ওটা কিনে নিয়ে যান। আয়েশা বেগম প্রথমটায় রাগে গজগজ করতে থাকেন। কিন্তু যখন রাশেদুল করীম সাহেব বটি এনে নিজেই কুটতে বসেন, সমস্ত রাগ পানি হয়ে যায়। বরং একটু আগের ক্রোধের অনুভুতি মনে আসার জন্য আয়েশা বেগম যারপরনাই লজ্জা পান।
দুজনে হাসেন, আনন্দ করেন কিন্তু কাঁদেন একা একা। একজন অন্যজন কষ্ট পাবে ভেবে কাঁদতেও পারেন না। আনন্দে থাকার অভিনয় করে যান দুজনে। এই বয়সে নাতি-নাতনিদেরকে সাথে নিয়ে বাড়ন্ত পারিবারিক সুখের অনবদ্য দোলায় মনের তীব্র সুখানুভূতিতে কোথায় ভেসে যাবেন! তা না, বিশাল বাড়িটাতে দু'জন মাত্র মানুষ এইটুকুন হয়ে বাস করেন।
শাহেদের ঢাকার ফ্ল্যাটেও কিছুদিন থেকেছিলেন।
কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারনে সেখানেও মন বসে নাই। যেখানে ভালোবাসা কেবলি দেখানোর বিষয় হয়ে যায়, সেখানে মন বসে কিভাবে? ভালোবাসা তো হৃদয় দিয়ে হৃদয়কে উপলব্ধি করার বিষয়। আমি ভালোবাসি- সেটা আমাকে মুখ দিয়ে কিংবা আঁকারে ইঙ্গিতে প্রকাশ করতে হবে কেন? যে যাকে যত বেশী ভালোবাসে, তার ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গী ততোটাই নীরব। নীরবেই ভালোলাগাগুলো পাখির মত ডানা মেলে বোধের গহীনের অবোধ্য জগতে নিরবচ্ছিন্ন উড়ে চলে।
শাহেদের ওখানে থাকাটা বউমা বিথী র পছন্দ ছিল না। যদিও শাহেদ প্রাণপন চায় বাবা-মার সাথে একত্রে থাকতে। কিন্তু মুখে কিছু না বললেও ঐ যে হৃদয়ের নীরব প্রকাশভঙ্গী- সে তো আর গোপন করা যায় না । একজন বাবা সন্তানের মুখ দেখেই সব কিছু বুঝে যান। বিথীও তো তার সন্তানের মতই। সেভাবেই দেখে এসেছেন। এখনো দেখেন।
ওর প্রতি তার কোনো রাগই নেই।
যেমন নেই মিতুর প্রতিও।
তবে কি সব রাগ রায়হানের উপর?
আবারো ঘুরে ফিরে সেই বড় ছেলে ফিরে এলো। মাছ বাজারের সামনে এসে গেছেন। ভাবনার অন্ধকার তলদেশ থেকে আবার বাইরের আলোময় জগতে ফিরে আসেন। নদীর কিছু ফ্রেশ মাছ কিনেন। এরপর বাড়ির দিকে রওয়ানা হন।
চিন্তা-ভাবনার অন্ধকার জগৎটাও মুহুর্তে আবারো তাঁকে ঘিরে ফেলে... পিছু পিছু আসে।
বিথীর সংসারে থাকার সময়গুলো ভাবেন। আয়েশা বেগম পান খান। বেসিনে কুলি করতে গিয়ে একটু আধটু পিকের আবছা দাগ থেকেই যায়। এটা বিথীর পছন্দ হয় না। মার্বেল পাথরের মত ঝকঝকে টাইলস বিছানো ফ্ল্যাটটি বিথী ঝকমকে রাখতে চেষ্টার কসুর করে না। পরিণত বয়সের দুজন শিশুর মত মানুষ ওর এই ঝকঝকে বাসাটিতে একটু আধটু দাগ লাগাতেই পারে। এতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কি আছে? কিন্তু বিথী এইসব ছোট খাট ব্যাপারগুলোই সামনে তুলে ধরে। যদিও ওর তুলে ধরার ভঙ্গিটি কদর্য নয়, তারপরও আয়েশা বেগমের কাছে খারাপ লাগে। আর নিজের অর্ধাঙ্গিনীর কাছে খারাপ লাগাটা রাশেদুল করীম কিভাবে ভালোলাগার গন্ডীতে আবদ্ধ করাতে পারেন?
তাই শাহেদের শত অনুরোধেও ওখানে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন না। তবে অন্তরের জন্মদিন বা এরকম বিশেষ দিনগুলিতে ওনারা আসেন। একদিন পরেই চলে যান। শাহেদ ব্যথিত হয়। বিথী নির্লীপ্ত থাকে।
ডি.কে.পি রোডের কালি মন্দিরটিকে পাশ কাটানোর সময়ে নারী কন্ঠের তীক্ষ্ণ বাদানুবাদের আওয়াজ কানে আসে। তবে থামেন না। আজকাল গা সওয়া হয়ে গেছে। এখানে তমিজ ব্যাপারি একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন। টিন শেডের এই বাড়িটাতে তমিজের স্ত্রী এবং ছেলে ও ছেলের বউ একত্রে থাকে। ওরা একই বাউন্ডারিতে আরো একটি পরিবারকে ভাড়া দিয়েছে। তমিজ বাজারে কাঁচা মালের ব্যবসা করত। এখন বয়সের ভারে ন্যুজ। কিছু করে না। ছেলে বাবার ব্যবসাতে না গিয়ে টেম্পু চালায়। এটাও তমিজ কিনে দিয়েছে। তবে ওর ছেলের বউয়ের সাথে তমিজের বউয়ের বনিবনা নেই। তাই সাংসারিক কলহ নিত্যদিনের ব্যাপার। তমিজের বউয়ের গলাই বেশী শোনা যাচ্ছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন, প্রতিটা পরিবারেই এই কলহ রয়েছে। এর ভিতরেই সবার বেঁচে চলা। আনন্দময় সময়গুলো কখনো হৃদয়কে প্রসারিত করে, পরক্ষণেই তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে চরম ঝগড়া হৃদয়কে সংকুচিত করে।
তবে কি জীবন মানে হৃদয়ের ক্রমাগত সংকোচন এবং প্রসারণ? অবাক হয়ে ভাবেন, বিজ্ঞানও তো তাই বলে। হার্টের সিস্টোল এবং ডায়াস্টোল এর দ্বারাই তো রক্ত পাম্প হয়ে সারা শরীরে পৌঁছে যায়। চরম এক দার্শনিক কথা ভেবে ফেলেছেন মনে করে একটু কি পুলকিত হন রাশেদ সাহেব?
সামনে চান মিয়ার চায়ের দোকান। হেঁটে হেঁটে এতোটা পথ চলে এসেছেন! একটু অবাক হন। আজ রিক্সা নেবার কথা মনেই ছিল না। মনটাই তো আজ কোথায় কোথায় ছিল যেন। খুব ক্লান্ত লেগে উঠে হঠাৎ। এতোটুকু পথ হাঁটার ক্লান্তি? নাকি এই একঘেয়ে জীবনকে বয়ে বেড়ানোর ক্লান্তি? সম্পর্কগুলোর মরে মরে বেঁচে থাকা দেখার ক্লান্তি? ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না।
চান মিয়ার দোকানের বেঞ্চে বসেন। কয়েকজন খদ্দের রাশেদ সাহেবকে দেখে একটু সরে বসে। তাঁকে যায়গা ছেড়ে দেয়। একজনের মুখে সিগ্রেট ছিল। সে লুকিয়ে দূরে ফেলে দেয়। ধোঁয়া ও গিলে একেবারে খেয়েই ফেলে। এলাকার সবাই ওনাকে সম্মান করেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নয়। এলাকার মানুষের যে কোনো সুখ-দুঃখে নিজেকেসামনে নিয়ে আসেন দেখেই এই ভালোবাসা নীরবে কাজ করে ওদের ভিতরে।
: কেমন আছেন স্যার? - চান মিয়া জিজ্ঞেস করে।
এলাকায় পরিচিতজনেরা রাশেদ সাহেবকে স্যার বলেই ডাকে। জীবনের প্রথম দিকে তিনি এলাকার হাইস্কুলে বেশ ক'বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। সেই থেকে তার নামই হয়ে গিয়েছিল রাশেদ মাস্টার। যা সময়ের সাথে সাথে এখন স্যারে পরিণত হয়েছে।
: আলহামদুলিল্লাহ! তুমি কেমন আছ?
: আপনার দোয়ায় ভালো আছি স্যার। চা খাবেন?
: চা? বানাও এক কাপ? - পাশে বসা দু'জনকে জিজ্ঞেস করেন,' তোমরা চা খেয়েছ?'
লোকদুজন উত্তরে মাথা নেড়ে নিশ্চুপ থাকে।
চান মিয়া গরম পানি দিয়ে চায়ের কাপ ধুয়ে নেয়। দুইবার করে সে ধোয়। জিনিসটা রাশেদ সাহেবের চোখে লাগে। আবারো সেই কিছুক্ষণ আগের পুরণ ভাবনাটা চলে আসে। চান মিয়া কি কাপটা দু'বার ধুয়েছে, তার প্রতি ওর ভালোবাসা বা সম্মানের বহিঃপ্রকাশ করার জন্য নয়? একবার ধুলেই যেখানে চলতো। চান মিয়ার দিকে গভীর ভাবে তাকান। সে রাশেদ সাহেবের তাকানো দেখে হাসে।
রাশেদ সাহেব মুহুর্তে চোখ নামিয়ে নেন। ভাবেন, এই সহজ সরল মানুষগুলো শহরের মানুষদের মত নয়। এদের ভালোবাসা আমাদের দৃষ্টিতে দেখানো বা শো করার মত মনে হলেও, আসলে তা নয়। আমরা নিজেরা মনের দিক থেকে এই দেখানোর প্রবণতা লালন করি বিধায়ই, এরকম অন্যদের বেলায়ও মনে করি।
চা শেষ করে বিল পরিশোধ করেন। মাছের ব্যাগটি নিয়ে লম্বা পীচঢালা পথে সামনের দিকে আগাতে থাকেন। চকিতে কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে রায়হানের উপর উনি কেন এতো রাগ, সেই ভাবনাটা উদয় হয়। রাশেদ সাহেব ভাবনার হাত থেকে মুক্তি পেতে আরো দ্রুত পা চালান। কিন্তু শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর মত মানুষের হৃদয় তো আর না। তাই দ্রুত হেঁটে কষ্টকর ভাবনাকে যতই দূরে সরাতে চান, সে যেন আরো দ্রুততায় তার দিকেই ফিরে আশে।
রৌদ্রোজ্জল এক সকাল বেলায় গরম পীচের উপর দিয়ে একজন অভিমানী বাবা নিজের কিছু চিন্তা-ভাবনাকে পাশ কাটাতে চান। কিন্তু ভাবনার হাত থেকে নিস্তার পান না। গরমে ঘেমে অস্থির হন।
তারপরও দ্রুত হেঁটে চলেন। তবে এখন আর তার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই, যেখানে পৌঁছানোর তাড়া আছে।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৯৬৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক শুভকামনা রইলো।
হুম, ঝগড়ার সময়টা অথবা তার পরে সব কিছুতে চরম বিরক্তি আর প্রচন্ড কষ্ট লাগে!
ধন্যবাদ অনেক ভাল লিখেছেন
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।
শুভকামনা রইলো।
শুভকামনা রইলো।
বর্তমান সময়ে দেখানো নকল ভালবাসার প্রাধান্যই সর্বক্ষেত্রে! অন্তরের খাটি ভালবাসার মোড়ক খুলে অনেকেই দেখতে চায় না।
ভাল লাগা-ভালবাসা প্রকাশে আনুষ্ঠানিকতাকেই সব মনে করে তারা!
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো...।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইলো।
হুম, ঝগড়ার সময়টা অথবা তার পরে সব কিছুতে চরম বিরক্তি আর প্রচন্ড কষ্ট লাগে!
ভালো বলেছেন।
শুভকামনা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন